বিয়ের আসরে মহাভারত
সুমনা ও অরিজিৎ এর শুভবিবাহ আনন্দে মাতোহারা দুই পরিবার। বিয়ের মন্ডপে উপস্থিত সুমনা ও অরিজিৎ তখনই ঘঠে বিয়েতে উপস্থিত সকলের সামনে এক অদ্ভুত ঘটনা।
বিয়ের আসন থেকে উঠে সুমনা সকলের সামনে নিজের বাগদত্তা অরিজিৎ 'কে সজড়ে দু'গালে দু'টো চড় বসিয়ে দেয় । উপস্থিত সকলেই সুমনার কাণ্ড দেখে অবাকের চোখে তার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। বিয়েতে উপস্থিত সকলেই সুমনার এমন কাণ্ডে তারা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছে , " কেউ বলছে মেয়ের এই বিয়েতে মত ছিলোনা আবার কেউ বাবা মা বােধহয় মেয়েকে জোরজবস্তী করেছে, আবার কেউ বলছে মেয়ের কারো সাথে নিশ্চয়ই কিছু ভাব ভালোবাসা ছিল , না হলে নিজের বিয়েতে কেউ কি নিজের বিয়ের আসনে নিজের হবু বরকে এভাবে চড় মারবে ! " ভাগ্যিস এই বিয়েটা সম্পূর্ণ হয়নি । না হলে বিয়ের আগেই কন্যার এই রুপ আর বিয়ে হয়ে গেলেতো ছেলের বাড়ির মুখ বুজে এই মেয়ের সমস্ত হুকুম গোলামের মত সহ্য করতে হতাে । সুমনা চিৎকার করে সকলের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো হ্যা আপনাদের মনে হয় ভগবান যা করছে ঠিক করেছে তাহলে সেটাই ঠিক। " এবার ছেলের মা বলেই উঠলো আমার ছেলে এমন কি করেছে যে, “ বিয়ের আগেই আমার ছেলেকে চড় মেরেছে । বিয়ে হলে তাে জুতা পেটা করতেও দ্বিধাবােধ করবে না । হায় আমার অরিজিৎ এর পােড়াকপাল রে । আমার আগেই থেকেই এই সমন্বে আমি রাজি ছিলাম না , মেয়ে আমার আগে থেকেই পছন্দ ছিলাে না । এখন আমি বেঁচে থাকতেই নিজের ছেলের মার খাওয়া দেখছি । হায় আমার পােড়াকপাল রে ! " বলেই কপালে চাপড় মারতে লাগলাে এবং কান্নাও করতে লাগলাে । অরিজিৎ এর বাবা সমরজিৎ বাবু এই বিয়ে বন্ধ করতে বাধ্য করল। এবংবলে উঠলো এই মেয়ের আচরণ ব্যবহার দেখলেই বোঝা যায় নিশ্চয়ই এই মেয়ের কারাে সাথে কোনাে ইন্টুপিন্টু আছে । না হলে কি আমার ছেলেকে এভাবে মারে তাও সকলের সামনে । " সুমনার বাবা অখিল রায় এবং মা শ্রাবণী রায় মেয়ের কাণ্ডজ্ঞান দেখে অবাক হয়ে গিয়েছে । বেশ রাগান্বিত হয়ে শ্রাবণী রায় তার মেয়ের গালে কষে চড় বসিয়ে দিলাে । এভাবে উপস্থিত সকলের সামনে নিজের মেয়ের কাণ্ড দেখে সকলের সামনে লজ্জিত হয়ে মাথাকাটা যাচ্ছে তাদের । কিন্তু মেয়ের হেলদূল কোনাে কিছুই তারা দেখছে না । সে স্থির দাড়িয়ে আছে আর মুখে তার আনন্দের হাসি । সুমনা এবারাে সকলের সামনে অরিজিৎ এর কলার টেনে আরেকটা চড় বসিয়ে দিলাে । এবার অরিজিৎ রেগে গিয়ে সুমনার গালেও একটা চড় বসিয়ে দিলো । " আমি কি করেছি যে তুই এভাবে আমাকে চড় মেরেই যাচ্ছিস । তাের মতাে থার্ডক্লাস মেয়েকে আমি আমার বাবা মা'র কথায় বিয়ে করতে রাজি হয়েছি । তা না হলে তাের মতাে মেয়েকে বিয়ে করতে আমার বয়েই গেছে । শালী তাের হয়তাে কোথাও , কারাে সঙ্গে কিছু আছে না হলে এভাবে আমাকে চড় মারার তাের সাহস হলাে কি করে । " সুমনার চোখ দিয়ে এবার আগুনের গােলাও ঝড়তে শুরু করেছে । “ এসব বলার আগে নিজের চরিত্রের দিকে একবারো তাকিয়েছ মিস্টার অরিজিৎ সেন । আপনার মতাে দুশ্চরিত্রের সাথে যে আমার বিয়েটা হচ্ছে না তার জন্যে আমি ভগবানের কাজে শত কোটি প্রনাম ! " এবার অরিজিৎ এর চোখ দিয়েও আগুনের পানি পড়ছে । " কি বললি তুই ! আমি দুশ্চরিত্র । তাের স্পর্ধা হয় কি করে আমাকে দুশ্চরিত্র বলার । আজ সকলের সামনে আমি তােকে মেরেই ফেলবাে । " এ বলে অরিজিৎ যেই না সুমনার গায়ে হাত তুলবে , তখনই সুমনা বলে উঠল এই সত্যবাধী যুদিষ্টীর চরিত্র সম্পর্কে আমার কিছু প্রমান আছে যা দেখলে তোমাদের সবার মুখ বন্ধ হয়ে যায় । আর বিয়েতে উপস্থিত সকলেই এবার বিস্ময়ের শেষ পর্যায়ে চলে এলো । বিয়ে বাড়ির সমস্ত লাইট বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে টিভির স্ক্রিনে একটা ভিডিও দেখা যাচ্ছে , আর তা হলাে হলো অরিজিৎ একটি মেয়ের সাথে অন্তরঙ্গতা করছে । মেয়েটি আর কেউই না তার দূর সম্পর্কে বােন সঙ্গীতার । । সুমনা হাততালিতেই লাইটস সব ফিরে এসেছে । উপস্থিত সবাই - ই ছিঃ ! ছিঃ ! করছে । অরিজিৎ এবং তার বাবা - মা , আত্নীয়রা সবাই বিস্ময়ের শেষ পর্যায়ে । এবার সুমনা কান্না করছে আর বলছে , " আমার কিসে আনন্দ , কিসে সুখী তা আমার বাবা - মা কখনােই উপলদ্ধি করতে পারবে বলে আশাই ছেড়ে দিয়েছি । কারণ তারা ভাবে তাদের সুখেই আমি সুখীত । আদৌ তারা বলতে পারবে না আমি কি চেয়েছি জীবনে । আপনার সাথে বিয়ের কথা চলাকালীন তারা আমাকে বলেছে আমার বিয়ে ঠিক । তারা আমার মতামতও জানতে চায়নি কখনােই ! আমিও তাদের কথা মেনে নিয়ে বিয়েটা করতে চেয়েছি । কারণ আমি মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে । আমার স্বপ্ন দেখার অধিকার থাকলেও পূরণ করার অধিকারটা তাদের হাতেই ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন