আরব্য উপন্যাস সিন্দবাদ জাহাজীর সমুদ্র অভিযান ভাগ 2

 পরের দিন হিন্দবাদ তার সেরা পােশাক পরে উপস্থিত হয়েছিল মহান নাবিকের ভবনে । আসন থেকে উঠে এসে দুহাতে ওকে জড়িয়ে ধরে চেয়ারের কাছে নিয়ে গেলেন সিন্দবাদ । সমস্ত অতিথিরা এসে যাওয়ার সাথে সাথেই ভােজ শুরু হয়েছিল আগের দিনের মতােই এবং আগের দিনের মতােই ভােজন শেষে সিন্দবাদ তাদের সম্বোধন করে বললেন - " হে আমার প্রিয় দোস্ত এবং অভ্যাগতগন , যদি অনুমতি দেন তাহলে আমি আমার দ্বিতীয় অভিযানের গল্প আপনাদের সামনে পেশ করতে পারি । যেখানে আপনারা প্রথম অভিযানের চেয়ে আরও বিস্ময়কর ঘটনার বর্ণনা পাবেন । " দ্বিতীয় অভিযান প্রথম অভিযান থেকে বাগদাদে ফিরে আসার পর আমার ইচ্ছে ছিল এবার শান্তিতে জীবনের বাকী দিনগুলি কাটানাের । কিন্তু কিছু দিনের ভেতরেই হাঁফিয়ে উঠলাম একঘেয়ে জীবন কাটাতে কাটাতে । সমুদ্র আমাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছিল । নতুন কিছু দেখার ইচ্ছে জেগে উঠল মনে । অগত্যা সেই সব পণ্যদ্রব্য সংগ্রহ করলাম যা আমার আগামীদিনের সফরের দেশগুলােতে ভালাে দামে বিক্রি হয় । তারপর উঠে পড়লাম সেই বনিকদের জাহাজে যাদের আমি ভাল মানুষ বলেই চিনতাম । শুরু হল আমার দ্বিতীয়বারের যাত্রা । আমরা এক দেশ থেকে অন্য দেশে ভেসে চললাম । সাথে থাকা জিনিসপত্র ভালােই বিক্রি হচ্ছিল । এভাবেই একদিন আমরা এমন এক স্থানে পৌঁছলাম যেখানে বাড়ি ঘর মানুষজন কিছুই নেই । শুধু নানা রকম ফল গাছ আর অনেকগুলাে ঝর্ণা । আমার সঙ্গীরা এখানে ঘুরে বেড়াচ্ছিল এবং ওখান ফুল ফল সংগ্রহ করাতেই যেতে উঠেছিল । আমি একটা ছায়ায় ঘেরা জায়গায় বসে সঙ্গে নিয়ে আসা খাবার আর মদ খাচ্ছিলাম । পরিবেশটা দারুন ছিল পেটে বেশ খানিকটা মদ পড়তেই চোখে ঘুম জড়িয়ে এলাে । কাছের এক ঝর্ণার মধুর শব্দ শুনতে শুনতে আমি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়লাম । কতক্ষণ ঘুমিয়েছিলাম জানি না , তবে যখন আমি চোখ খুললাম আশেপাশে কাউকে দেখতে পেলাম না । দ্রুত উঠে ছুতে গেলাম সমুদ্রের ধারে । কেউ কোথাও নেই । একরাশ আতঙ্কের সাথে অনুভব করলাম আমি একা । জাহাজ আমাকে ফেলেই তার যাত্রা শুরু করে দিয়েছে । হতাশায় আর্তনাদ বেরিয়ে এলাে আমার বুক ফেটে । দূরে দেখতে পেলাম আমার জাহাজ মিলিয়ে যাচ্ছে দিগন্ত রেখায় । তখন মনে হল কি দরকার ছিল আবার সমুদ্র যাত্রা করার । আমিতাে ঘরেই আরামে ছিলাম । এবার কি হবে ? কিন্তু সাতপাঁচ ভেবেই বা কি লাভ । তাই নিজেই নিজের মনকে সাহস যােগালাম এবং এদ্বীপ থেকে সভ্য জগতে ফিরে যাওয়া যায় কিভাবে সেটা ভাবতে শুরু করলাম । উঠে গেলাম একটা লম্বা গাছে । সমুদ্রের দিকে তাকালাম । না কোথাও কিছুর দেখা নেই । নীল জল শুধুই ছড়িয়ে আছে চরাচরে । আশাব্যঞ্জক কিছু খুঁজে না পেয়ে এবার পিছন ঘুরে স্থলভাগের দিকে তাকালাম । আর তখনই চোখে পড়লাে এক বিশাল মাপের দ্যুতি বিচ্ছুরনকারী সাদা বস্তু । সব চিন্তা উধাও হয়ে এক অসীম কৌতূহল আমার মনে উদয় হল । ওটা কি ? অনেক দূরে অবস্থান করায় কিছুই বুঝতে পারছিলাম না । গাছ থেকে নেমে আমার সাথে যা কিছু ছিল সেসব গুছিয়ে নিয়ে যত দ্রুত সম্ভব আমি শুরু করলাম ওটার দিকে এগােনাে । যত এগােচ্ছিলাম ততই ওটার আকৃতি স্পষ্ট হচ্ছিল । একটা বিশাল আকারের গােলাকার বস্তু । কাছে গিয়ে যখন আমি ওটাকে স্পর্শ করলাম তখন অনুভব করলাম জিনিসটা দারুন মসৃণ এবং নরম । ওটার ওপরে ওঠার মতাে কোনাে ধাপ আমার চোখে পড়লাে না । অগত্যা একটা দরজা জাতীয় কিছুর সন্ধানে ওটার চারদিকে প্রদক্ষিন করা শুরু করলাম । কিন্তু কিছুই দেখতে পেলাম না । কমপক্ষে পঞ্চাশ পা আমাকে হাঁটতে হয়েছিল ওটার চারদিকে একপাক দেওয়ার জন্য । সহসাই জায়গাটা এবং ওই বিশাল বস্তু অন্ধকারে ঢেকে গেল । ঠিক যেন সূর্যকে ঢেকে দিল একটা বড় সড় মেঘ । অবাক হয়ে দেখলাম যে একটা অতিকায় একটি পাখি আকাশে চক্কর কাটছে । মনে পড়ে গেল নাবিকদের কথা । ওরা প্রায়শই রক নামক এক দানবাকৃতি পাখির কথা বলত । এবার বুঝতে পারলাম যে সাদা বস্তুটার চারপাশে আমি ঘুরে এলাম সেটা কি । ওই পাখিটার ডিম !

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আমার জিবনের সত্য প্রেমের গল্পকথা, The true love story of my life

আমার জিবনের প্রথম প্রেমের গল্প

মধ্যস্থতা বিবাদ নিষ্পত্তির অন্যতম উপায় Mediation is one of the ways to resolve disputes