আমার জিবনের প্রথম প্রেমের গল্প
আসলে গীতশ্রীও আমার মতই চিরকাল সিরিয়াস ছাত্রী ছিল । এইসব প্রেমট্রেম নিয়ে কোনদিনও মাথা ঘামাত না , তাই বােধ হয় ওর সাথে আমার এত গভীর বন্ধুত্ব ছিল । আর এই জন্যেই আজ সরাসরি ওকে কিছু বলতে আমার কেমন যেন বাধবাধ ঠেকছিল । অথচ না বললেও শান্তি পাচ্ছি না । তাই খানিকটা কৌশলের সাহায্য নিলাম । " হ্যাঁ রে , আমাদের ব্যাচের ছেলেমেয়েদের সম্পর্কে তাের কি ধারণা ? " | কোন ব্যাচের ? ম্যাথের গুলােতাে সব পুরােন পাপী । তুই তাে নতুন ঢুকেছিস , আমি তাে টেন থেকেই ওই স্যারের কাছে পড়ি । কিন্তু আমি শিওর ছিলাম না ইলেভেনেও পড়বাে কিনা । তাই পরে জয়েন করলাম । স্যার বিদিশাদের একটু বেশিই তােল্লাই দেয় । আমাদের স্কুলেরগুলাে তাও ভালাে । না না ম্যাথের ব্যাচের কথা বলা হচ্ছে না অন্য গুলাে।
আমি গলাটা বেশ মােলায়েম করে বললাম , " তুলনায় কেমিস্ট্রি ব্যাচটা বেশ ভালাে বল ? তা যা বলেছিস । স্যার কিন্তু বেশ রাগি । তাই কেউ ঝামেলা করার সুযােগই পায়না । তাছাড়া আমাদের ব্যাচটা বেশ ভালাে । " আমি কেমন যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম । বিজ্ঞের মত মাথা নেড়ে আবার শুরু করলাম , তাের কাকে বেশি কম্পিটিটর বলে মনে হয় ? দেখ তৃষা বেশি দেখায় , কিন্তু আমার ওকে মুখস্থ ক্যাটাগরির মনে হয় । গ্রে ম্যাটার কম আছে । আর মন্দিরাও লাক বাই চান্স বেশি পেয়েছে । মাধ্যমিকে ফেল করবে না । " আমি সাহস করে আরেকটু এগােলাম , " আর ছেলেদের মধ্যে ?ও খানিক্ষন মাথা চুলকালাে । " রাহুল । ও আমার সাথে ম্যাথ টিউশনে পড়ত তাে টেনে । আমি জানি , বেশ ভাল পড়াশােনায় । টাফ কম্পিটিটর । এখন মনে হয় অন্য ব্যাচে পড়ে । " আমি প্রায় আকাশ থেকে পড়লাম । " তুই আমাকে আগে বলিসনি তাে।ওর কথা , মনে তােরা যে একসাথে পড়তিস ? " আরে আমার সাথে ওর কোন কথাবার্তা কিছুই ছিলনা । ও , রনি , টুপাই সবাই আমাদের সাথেই পড়তাে । রনিকে তাে জানিসই কেমন বিচ্ছু । ওর সাথেই আমার যা একটু আধটু কথা হত । " " ওহ আচ্ছা , বুঝলাম । তা যা বলেছিস , রনি একটা পাগল । কি এক একটা উদ্ভট কাজ করে দেখেছিস ? বাচ্ছাদের মত করে । " গীতশ্রী হেসে উঠলাে সিরিয়াসলি। ওকে দেখেই আমার ছোট ভাই ভাই ফিলিংস হয়।
আমি সুযােগ বুঝে আলতাে করে বলে উঠলাম , " আর রাহুলকে দেখে তাের মনে হয় দাদা দাদা লাগে না ? " গীতশ্রীর হাসি থেমে গেল । কেমন যেন অন্যমনস্ক ভাবে বলল , " না দাদার মত নয় । রাহুল বন্ধুর জায়গাতেই ঠিক আছে । আমি ওরকম ছেলেকে বন্ধু হিসাবেই চাইব । " আমি হটাৎ বিষম খেলাম । আসলে গীতশ্রীর মুখ থেকে এরকম কথা শুনব আশা করিনি । আমি ওকে আরেকটু পরখ করতে চাইলাম , ঠিক বুঝলাম না । রাহুলকে তাের কেমন লাগে ? " গীতশ্রী উঠে বসলাে । বালিশটা কোলে নিয়ে বলল , " ওকে দেখে আমার মনে হয় , ওরকম একজন সঙ্গে থাকলে গােটা পৃথিবীর সাথে লড়াই করা যায় । সবাই এগেনষ্টে চলে গেলেও , ও যাবে না । আমি স্তম্ভিত । এ তো আমার কথা । ও কি করে বলছে ! আমি আস্তে করে একটা প্রশ্ন করলাম , " তাের তাহলে ওকে ভালাে লাগে ? হ্যা লাগে । ভালাে লাগে । " আমি আর থাকতে পারলাম না । এক প্রকার ঘােষণাই করে দিলাম , " আমারও ওকে ভালাে লাগে । খুবই ভালো লাগে । " কয়েক মুহূর্ত আমরা একে অপরের দিকে তাকিয়ে থাকলাম তারপর দুজনেই হেসে উঠলাম । সত্যি বলছি , আমার সেদিন কোন রাগ , দুঃখ বা হিংসা , কোনােটাই হয়নি । আমি তাে আগেই বলেছি , আমি জানতাম যে আমার অনুভূতির কোন পরিনতি নেই । তাই আমি বাদে অন্য কেউ ওকে পছন্দ করলেই বা অসুবিধা কোথায় ! আর গীতশ্রীর ক্ষেত্রে তাে কোন হিংসা খাটেই না । আমরা দুজন সেই সেই ক্লাস 4 থেকে হৃত্বিকের ফ্যান ।
একসাথে দুজনেই হৃত্বিকের প্রেমে পাগল ছিলাম । তখন তাে কোন অসুবিধা ছিল না ! তাহলে এটাই বা আলাদা কি । আমরা কি রাহুলকে কখনাে বলতে যাচ্ছি , না ওর সাথে সত্যিকারের সম্পর্ক তৈরি করতে যাচ্ছি ! এ তাে মনের অনুভূতি মনেই থাকবে । তাই ভাগ করে নিলে ক্ষতি কি ! কিন্তু ঈশ্বরের মনে যে অন্য পরিকল্পনা আছে , তা তাে আমি তখন জানতাম না ।
খুব ভালো
উত্তরমুছুন