আরব্য উপন্যাস, সিন্দবাদ এক সাহসী নাবিক

 সিন্দবাদ এক সাহসী নাবিক  এটা সেই সময়ের গল্প যখন হারুন - আল - রাশিদ ছিলেন বাগদাদের খলিফা । হিন্দবাদ নামের এক গরীব মালবাহক বাস করতাে বাগদাদে । একদিন খুবই গরম পড়েছে । আকাশের বুক থেকে সূর্য ছুড়ে দিচ্ছে আগুনের হল্কা । আর সেদিনই শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ভারী বােঝা পৌছানাের কাজ পেয়েছিল সে । অর্ধেক পথ যেতে না যেতেই বেচারী খুব ক্লান্ত হয়ে পড়ে । কিছু দূরে রাস্তার ধারে একটা ছায়াচ্ছন্ন অংশ চোখে পড়ে তার । সেদিকে এগিয়ে যেতেই শীতল বাতাসের সাথেই তার নাকে ভেসে আসে গােলাপ জলের গন্ধ । বােঝাটা মাটিতে  নামিয়ে রেখে সে এক বিশাল ভবনের ছায়ায় গিয়ে বসে । হিন্দবাদ অনুভব করে এর চেয়ে আরামদায়ক কোনাে স্থান হতেই পারেন । 


ওই বাড়ির খােলা জানালা দিয়ে এবার গােলাপ জলের সাথে চন্দনের সুগন্ধও ভেসে  আসে ওর নাকে । ভেসে আসে মিষ্টান্নের সুগন্ধ । শুনতে পায় সুরেলা সঙ্গীত এবং  নানান গাইয়ে পাখির কোলাহল । তার নাকে এরপরেই ভেসে আসে একাধিক জিভে জল আনা খাবারের গন্ধ | মাল বাহকের বুঝতে অসুবিধা হয়না এই ভুবনে কোন আনন্দ উৎসব এবং ভােজের ব্যবস্থা হয়েছে । অবাক সে ভাবার চেষ্টা করে এই অসাধারণ ভবনে কে থাকে ? এই ভবনের বিষয়ে সে তাে কিছুই জানেন । অবশ্য এই রাস্তায় সে খুব বেশী আসেনি এর আগে । কৌতূহল  মেটাতে সে এগিয়ে যায় ওই ভবনের প্রধান দরজার কাছে দাড়িয়ে থাকা জমকালাে পােশাক পরিহিত মানুষ গুলাের কাছে । তাদের একজনের কাছে জানতে চায় , এই ভবনের মালিকের নাম । উত্তর পায় , " সেকি তুমি বাগদাদে থাকো আর এই বাড়ীর মালিকের নাম জানােনা ? এখানে বাস করেন মহান নাবিক সিন্দবাদ । সেই বিখ্যাত ভ্রমণকারী যিনি এজগতের প্রত্যেকটা সমুদ্র পথে অভিযান করেছেন । "  মালবাহক হিন্দবাদ এর আগে একাধিক মানুষকে প্রায়ই সিন্দবাদের অগাধ সম্পদের কথা বলতে শুনেছে । যা শুনে তার ঈর্ষাই হয়েছে । নিজের চালচুলাের ঠিক নেই আর একজন মানুষের সম্পত্তি কত তার কোন হিসাবকিতাব নেই । আকাশের দিকে তাকিয়ে ওপর ওলার উদ্দেশে উচ্চস্বরে সে চিৎকার করে বলল , " হে প্রভু , আপনার এ কেমন বিবেচনা ? সিন্দবাদের জীবন এবং আমার জীবনে এতাে পার্থক্য কেন ! নিজেকে এবং আমার পরিবারকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য রােজ আমাকে প্রানপন কষ্ট করতে হয় । দুর্ভাগ্য আমার পিছু ছাড়েনা । আর ওই সিন্দবাদ ! না জানে কি ভাগ্য নিয়েই জন্মেছে ? ইচ্ছেমত অর্থ ব্যয় করে আর সুখে জীবন কাটায় ! সে কী এমন করেছে যে আপনি তাকে এইরকম সুখের জীবন দান করেছেন । আমার জীবনে এত কষ্ট কেন ? আমি কী করেছি ? " কথা শেষ হওয়ার প্রায় সাথে সাথেই সেই বিশাল ভবনের দরজা খুলে গেল । একজন মানুষ এসে দাঁড়ালাে হিন্দবাদের সামনে । বলল , " আমার সঙ্গে চলাে । মহান সিন্দবাদ , তােমার সাথে কথা বলার ইচ্ছা পােষণ করেছেন । " হিন্দবাদ কথাটা শুনে অবাক হলােনা বরং ভয় পেল । এইরে তার একটু আগে বলা কথাগুলাে সম্ভবত সিন্দবাদের কানে পৌছে গেছে । উনি অসন্তুষ্ট হয়েছেন । না যাওয়ার অজুহাত দেখানোর চেষ্টা করে সে বললাে , “ আমি তাে যেতে পারবাে না । দেখছনা আমার সাথে মালপত্র আছে । " সিন্দবাদের ভৃত্য জানালাে , চিন্তার কিছু নেই ওগুলাের দায়িত্ব সে নিচ্ছে । একইসাথে এমন সুত্রে সে পুনরায় সিন্দাদের নিকটে যাওয়ার কথা জানালাে যে হিন্দবাদের সাহস হল না সেটা প্রত্যাখান করার । লােকটার পিছু পিছু সে গিয়ে পৌছালাে একটা প্রশস্ত কক্ষে । যার মাঝখানে একটা বিরাট টেবিলে নানা ধরণের খাবার সাজানাে আছে । টেবিলের চারপাশের চেয়ারে বসে আছে অনেক মানুষ । এদের ভেতর একটি চেয়ার একটু বেশি উঁচু এবং দামি । সেখানে বসে আছেন একজন লম্বা , শক্ত পােক্ত চেহারার মানুষ । তার দীর্ঘ সাদা দাড়ি তাকে আলাদা গাম্ভীর্য প্রদান করেছে । তাঁর চেয়ার থেকে কিছুটা দূরে বেশ কয়েকজন মানুষ দাঁড়িয়ে আছে । দেখেই বােঝা যাচ্ছে ওরা ওই বিশেষ মানুষের কোনাে আদেশ পালনের অপেক্ষা করছে । যে ওকে ভেতরে এনেছিল সে জানালাে , ইনিই বিখ্যাত সিন্দবাদ নাবিক । মালবাহক আয়োজনের বিশালতা দেখে আগের চেয়ে বেশি আতঙ্কিত হয়ে কাঁপতে কাঁপতে কোনােক্রমে সিন্দবাদের উদ্দেশ্যে সালাম ঠুকল । সিন্দবাদ ওর দিকে তাকিয়ে ইশারা করলেন কাছে আসার । হিন্দবাদ এগিয়ে গেল ধীর পায়ে । মহান নাবিক ডানদিকের চেয়ারটা দেখিয়ে ওকে বসতে বললেন । তারপর টেবিলে রাখা থালায় নিজের হাতে সাজিয়ে দিলেন নানা উপাদেয় খাদ্যবস্তু । পানপাত্রে ঢেলে দিলেন উৎকৃষ্ট মদ । পুনরায় ইঙ্গিত করলেন খাওয়ার । হিন্দবাদ সময় নষ্ট না করে শুরু করলাে খেতে । খাওয়া শেষে হাত মুখ পরিষ্কারের পালা মিটে যেতে সিন্দবাদ নাম জিজ্ঞাসা করলেন এবং সে কি করে সেটাও জানতে চাইলেন । " আজ্ঞে , জনাব আমার নাম হিন্দবাদ । পেশা , মালবহন করা । " সিন্দবাদ সামান্য হেসে বললেন , ' তােমাকে এই ভােজের আসরে পেয়ে আমি খুব খুশি হয়েছি । আর হ্যাঁ আপনারা সিন্দবাদ সামান্য হেসে বললেন , " তােমাকে এই ভােজের আসরে পেয়ে আমি খুব খুশি হয়েছি । আর হ্যাঁ আপনারা আজ যারাই এই ভােজসভায় এসেছেন তাদের উপস্থিতিতে আমি ধন্য । আমি আনন্দিত । ” একথা শুনে উপস্থিত অভ্যাগতরাও তাদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করলেন । হিন্দবাদ আরাে একবার সালাম করলাে । সিন্দবাদ তাকালেন হিন্দবাদের দিকে । বললেন , ' একটু আগে রাস্তার ধারের ওই জানলার কাছেই আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম । তুমি নিচে রাস্তার ধারে বসে যা বলেছিলে সব শুনেছি । ওই কথাগুলাে আর একবার বলােতাে বাপু । ” সিন্দবাদের কথা শুনে হিন্দবাদের আক্কেলগুড়ুম হয়ে গেছে । সে কাঁপতে কাঁপতে বলল , " জনাব আমাকে ক্ষমা করে দিন । গরীব মানুষ । ক্ষিধে তেষ্টার জ্বালায় ক্লান্তির মুহূর্তে আমি ওইসব উল্টোপাল্টা কথা বলে ফেলেছি । " " আরে ! ভয় পাচ্ছাে কেন ? " , সিন্দবাদ বললেন , “ ওই কথা বলার জন্য আমি তােমাকে মােটেই দোষী মনে করছি না । বরং এটাই বলতে পারি যে আমি তােমার পরিস্থিতি বুঝতে পেরেছি এবং তার জন্য আমার দুঃখ হচ্ছে । তুমি আমার সম্পর্কে ভুল ধারনা করছে । আমি তােমার অবস্থার উন্নতি করতে চাই । বেশীরভাগ মানুষই তােমার মতই ভাবে । মনে করে আমি কোনও অসুবিধা বা বিপদ ছাড়াই এই সমস্ত সম্পদ অর্জন করেছি আর বিলাসিতা করে দিন কাটাচ্ছি । বাস্তবটা কিন্তু একেবারে আলাদা । আজকের এই অবস্থায় পৌছানাের আগে আমি বছরের পর বছর সম্ভাব্য সবধরণের বিপদের মুখােমুখি হয়েছি । ” উপস্থিত অভ্যাগতদের দিকে তাকিয়ে বললেন , “ হ্যাঁ , এটাই সত্যি , মাননীয় বন্ধুগন । " উপস্থিত জনগণ নানা ধরনের বিস্ময় সূচক শব্দ উচ্চারন করলাে এটা শুনে । সিন্দবাদ বললেন , “ সমুদ্রের বুকে আজ অবধি যত মানুষ পাড়ি জমিয়েছে তাদের সকলের চেয়ে আমার অভিজ্ঞতা অনেক বেশী পরিমানে দুঃসাহসিক ছিল । এত অদ্ভুত সব কাজ আমাকে সমুদ্রপথে পাড়ি দেওয়ার সময় করতে হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই । আপনারা সকলেই হয়তাে আমার সাতবার সমুদ্র অভিযানের কথা সম্পর্কে শুনেছেন । সেইসব অভিযান কালে সমুদ্র এবং স্থলপথে যে বিপদ ও বিস্ময়ের সাথে আমার সাক্ষাত হয়েছে , আমি আজ তার পূর্ণ এবং সত্য বিবরণ পেশ করতে চাই । আশা করি সেসব শুনতে আপনাদের ভালােই লাগবে । ” সকলেই উৎসাহের সাথে সম্মতি জানালাে । সিন্দবাদ তাঁর কাহিনী শুরুর আগে আদেশ দিলেন , রাস্তায় হিন্দবাদের যে বােঝা পড়ে আছে সেটা যেখানে পৌছানাের কথা ছিল সেখানে যেন পৌছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয় । এটা শুনে হিন্দবাদ সিন্দবাদের নামে জয়ধ্বনি দিয়ে উঠলাে ।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আমার জিবনের সত্য প্রেমের গল্পকথা, The true love story of my life

আমার জিবনের প্রথম প্রেমের গল্প

মধ্যস্থতা বিবাদ নিষ্পত্তির অন্যতম উপায় Mediation is one of the ways to resolve disputes