আমার জিবনের সত্যি প্রেমের গল্প
মিনিট দুয়েক যেতেই দেখি বেশ কয়েকজন ছেলে সাইকেলে করে উল্টো দিক থেকে আসছে । নিশ্চয়ই স্যারের বাড়ির দিকে যাচ্ছে । সম্ভবত সাতটা নটা ব্যাচে পড়বে বলে । ওদের উচ্চকিত গলার আওয়াজ শুনে একটু দূর থেকেই বুঝে গেলাম এরা আমাদের কেমিস্ট্রি ব্যাচের ছেলেরা মানে রনি , বিনায়ক , রাহুল সবাই আরকি । ওরা আমাকে দেখতে পায়নি । আর পেলেই বা কি । আমিও ওদের সাথে কথা বলিনা , ওরাও বলে না । আধ মিনিটের মধ্যেই ওরা আমার একদম পাশাপাশি চলে এলাে । আর রাহুল ছিল সবচেয়ে ধার ঘেঁষে মনে একদম ডানদিকে । ও একেবারে আমার রিক্সার গা ঘেঁষে পেরােল । একবার তাকালাে আমার দিকে । এই প্রথম আমিও ওর মুখের দিকে ভালাে করে তাকালাম , স্পষ্টভাবে । প্রথমবারের জন্য আমাদের চোখাচুখি হল । অ্যাপে পড়ুন । জানিনা কেন কিভাবে আমার শরীরে নাকি মনে আমি কোটি ভােল্টের শক অনুভব করলাম । কি যে এক দারুন অনুভূতি ছড়িয়ে গেল আমার শিরায় , উপশিরায় আমি শব্দে ব্যাখ্যা করতে পারবাে না । এমন তীব্র সুন্দর অনুভূতি আমার জীবনে আর কখনও হয়নি , এর আগেও না , এর পরেও না । আমি শুধু এটুকু বুঝলাম আমার ওকে ভালাে লেগে গেছে । আমি জানিনা কিভাবে বা কেন কিন্তু আমি রাহুলকে ভালবেসে ফেললাম , বলতে গেলে প্রথম দৃষ্টি বিনিময়েই ।
প্রথম প্রেমের ফলস্বরূপ আমার মনে যে অনুভূতিটি প্রথম সঞ্চারিত হল তা হল কৌতূহল । হ্যাঁ স্বাভাবিকভাবেই আমি রাহুলের বিষয়ে আরাে জানতে ভীষন আগ্রহী হয়ে উঠলাম । আর তার সাথে শুরু হল আমার পর্যবেক্ষণ পর্ব । মানে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখা । তখনকার সময়ে এই সব ফেসবুক , ইন্সটাগ্রাম ইত্যাদির প্রচলন ছিল না । হ্যাঁ ' অরকূট ' নামক কি এক বিচিত্র ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম চালু ছিল , যেখানে অনেকেরই বিচরণ ছিল ( ফেসবুকের পিতামহ বােধ হয় ) । তা , আমি আবার একটু সেকেলে ছিলাম কিনা , তাই এসব ব্যাপারে আমার তেমন কোন ধারণা ছিল না ( থাকলেও লাভ হত না ! ) । সেক্ষেত্রে তথ্য আহরণের জন্য পিঙ্কিই আমার কাছে তথ্য মিত্র কেন্দ্রের ভূমিকা পালন করল । কথায় কথায় ওর পরিবার সম্পর্কে একটু জেনে নিলাম , জানলাম ও বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান । বিশেষ বান্ধবী আছে । কিনা সেটাও জানলাম । উত্তর নেতিবাচকই ছিল , কিন্তু অনেক মেয়েই ওর প্রতি আকৃষ্ট এবং যথেষ্ট দুর্বল , সে কথাও কানে এলাে । আমার অবশ্য সেই সব নিয়ে বিশেষ কোনও সমস্যা বা ভাবনা ছিল না । আসলে আমি জানতাম আমি ওর সাথে কখনই সম্পর্ক তৈরি করতে পারবাে না । আর আমি ওকে পছন্দ করি বলে ঔ যে আমাকে কোনােদিন পছন্দ করবে সেরকম কোন দুরাশা আমি কখনােই করতাম না । আমি একতরফা ভালােবাসাতেই যথেষ্ট সন্তুষ্ট ছিলাম । ( আয়ে দিল হ্যা মুশকিল সিনেমাটি আমার মনের ভাবনা চুরি করে বানায়নি তাে ! ) সে যাই হােক কেমিস্ট্রি টিউশন এর দুটো দিন আমার কাছে সপ্তাহের সেরা দিন হয়ে উঠলাে । আমি সারা সপ্তাহ অপেক্ষা করে থাকতাম বুধ , শনি সকাল সাড়ে ছটার থেকে সাড়ে আটটার ওই সময়টুকুর জন্য। নোটিশ বোর্ডে লেখার সময়, স্যার পড়া বোঝানাের সময়, লুকিয়ে লুকিয়ে আমি ওকে আমি দেখতে থাকতাম ।
একদিন ব্যাচে খুব কম ছাত্র ছাত্রী উপিস্থিত ছিল , বৃষ্টির জন্য । স্যার সেদিন আমাদের পারমানবিক উপকক্ষ সম্পর্কে পড়াচ্ছিলেন । কিছুটা নােট লেখানাের পর উনি বললেন , যেহেতু আজ খুব কম লােকজন এসেছে , তাই ছবিটা উনি আর কষ্ট করে বাের্ডে আঁকছেন না । রাহুলকে বইটা দিয়ে কোন কোন ছবি আঁকতে হবে বুঝিয়ে দিলেন । আর বললেন এগুলাে খাতায় এঁকে , ওর খাতাটা সবাইকে দিয়ে দিতে । উনি চা খেতে ভেতরে যাচ্ছেন ততক্ষনে আমরা যেন ওর খাতা দেখে ছবিগুলাে এঁকে ফেলি । প্রস্তাবটিতে আমি ভারী খুশি হলাম । বাইরে প্রবল বর্ষণের সাথে সাথে মেঘেরাও গর্জন করছে , আর তার সাথে তাল মিলিয়ে আমার বুকের ভেতরেও যেন প্রথম বর্ষণের অনুভূতি ঘনিয়ে আসছে । আমি বন্ধুদের সাথে গল্প করছি , কিন্তু আমার চোখ ওর দিকে চেয়ে রয়েছে । সবার অলক্ষ্যে !
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন