আমার জিবনের সত্যি প্রেমের গল্প
রসায়নের সাথে সাথে ধীরে ধীরে সব কটি টিউশনই শুরু হয়ে গেল । তার মানে সব কটি বিষয়েরই মুখদর্শন হয়ে গেল । বুঝতে পারলাম , যে বিষয়গুলি ক্লাস টেন অবধি নিরীহ পান্ডার মত ছিল , সেগুলাে ইলেভেনে ডাইনােসরের রূপ ধারণ করেছে । আমার অংকের স্যারের বাড়ির কাছে একটা শিব মন্দির ছিল । প্রথম বার অংকের ক্লাস করার পর আমরা দল বেঁধে কজন বন্ধু ওই মন্দিরে গিয়ে আকুল কণ্ঠে বাবা মহাদেবকে বললাম , এ কোথায় এনে ফেললে ঠাকুর ? আমাদের সহজ , সরল , দুস্টুমিস্টি বীজগণিতের একী রূপ ? যাই হােক । মনের দুঃখ মনেই চেপে রেখে বিষয়গুলিকে আরাে একবার ভালােবাসার চেষ্টা করতে থাকলাম । এদিকে প্রায় সপ্তাহ দুয়েক হয়ে গেছে । মানে কেমিস্ট্রির চারটে ক্লাস । ধীরে ধীরে ব্যাচের সবার সাথে পরিচিত হতে থাকলাম ।
আমাদের ব্যাচে মেয়েদের মধ্যে সবচেয়ে উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক ছিল তৃষাই । না মােটেই তার পড়াশােনার জন্য নয় । তার ঘনঘন প্রেমে পড়ার অভ্যাসের জন্য । তার বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রেমের কীর্তি সবার মুখে মুখে ফিরত । আমার স্বভাব অনুযায়ী আমার ওর সাথে খুব একটা মধুর সম্পর্ক হওয়ার কথা ছিলনা , কিন্তু মেয়েটির যেচে এসে কথা বলার স্বভাব থাকায় আমি ওকে এড়িয়ে যেতে পারতাম না । ওই ব্যাচে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড গীতশ্রী আর আরাে একজন খুব ভালাে বন্ধু অঙ্কিতাও ভর্তি হল । আমার স্কুলের আর এক ক্লাসমেট পিঙ্কিও ভর্তি হল । এর আগে ও একটু শত্রু পক্ষ ঘেঁষা ছিল বলে , আমার সাথে সেভাবে মিত্রতা ছিল না । কিন্তুু নতুন ক্লাসে ও নিজে থেকেই এগিয়ে আসে আমার সাথে বন্ধুত করতে, তাই আমিও ওকে ফেরাতে পারলাম না।
ওই ব্যাচে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড গাতশ্রী আর আরাে একজন খুব ভালাে বন্ধু অঙ্কিতাও ভর্তি হল । আমার স্কুলের আর এক ক্লাসমেট পিঙ্কিও ভর্তি হল । এর আগে ও একটু শত্রু পক্ষ ঘেঁষা ছিল বলে , আমার সাথে সেভাবে মিত্রতা ছিলনা । কিন্তু নতুন ক্লাসে ও নিজে থেকেই এগিয়ে এলাে বন্ধুত্ব করতে , তাই আমিও ওকে ফেরাতে পারলাম না । আপনারা হয়তাে ভাবছেন , প্রেম কাহিনীর মধ্যে এত বন্ধুদের কথা আসছে কেন ! আসলে এই চরিত্রগুলি আমার প্রেম কাহিনীর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হয়ে দাঁড়াবে । তাই পূর্বপরিচিতিটুকু করিয়ে রাখলাম আরকি ! পিঙ্কির সাথে ব্যাচের সব ছেলেদেরই বেশ বন্ধুত্ব ছিল । ওই আমাদের কাছে সবার গল্প করত । বেশির ভাগ ছেলেই একাধিক টিউশনে আমাদের সাথেই পড়ত । রনি নামের এক ভীষন দুরন্ত ছেলে ছিল । দুস্টুমিতে যার জুড়ি মেলা ভার । তবে খুব ফ্রেন্ডলি , মানে এমন একজন যাকে সব মেয়েরাই ফ্রেন্ডজোনে রাখতে চাইবে । তার সাথে বেশ বন্ধুত্ব ছিল রাহুলের । পিঙ্কির কাছ থেকেই রাহুলের ব্যাপারে অনেক কিছু জানলাম । ছেলেটি পড়াশােনায় বরাবর ভাল । স্বভাব চরিত্রও খুব ভালাে , শুধু একটাই সমস্যা ... খুব মাথা গরম । আর মারপিটে তার জুড়ি মেলা ভার । ততদিনে সবাই মােটামুটি আমার মুখ চেনা হয়ে গেছে । রাহুলও । ভালােভাবে না দেখলেও চোখে চশমা উজ্জ্বল শ্যামবর্নের , বেশ লম্বা এই ছেলেটির চেহারা একটু চোখে পড়ার মত ছিল বৈকি । পিঙ্কির কাছ থেকেই জানতে পারলাম সে নাকি জিম করে , থেকেই । এই বয়স আমি তবে সবার মুখের থেকে গলার স্বরই বেশি চিনতাম । কারণ তখন অবধি কোন ছেলের সাথে কথা বলা তাে দূর , ভালাে করে মুখের দিকে তাকাতেও আমার বেশ লজ্জা লাগতাে
আমার বেস্ট ফ্রেন্ড গীতশ্রী আমার সাথে বায়ােলজি , ইংলিশ / বাংলা আর অংক টিউশনও পড়তে শুরু করল । এত দিন অবধি প্রিয়বন্ধু হলেও আমরা একে অপরের বাড়িতে সেভাবে যেতাম না । কিন্তু এবার সেটা শুরু হল । আমি প্রায়ই ওদের বাড়ি যেতাম , বা ও আমাদের বাড়ি আসতাে । আমরা একসাথে পড়াশােনা করতাম , গান শুনতাম আর জমিয়ে আড্ডা দিতাম । তবে সেই আড্ডা গুলােতে আমাদের জীবনের লক্ষ্য আর স্বপ্নই থাকতাে বেশি করে । আর তার সাথে আমাদের স্বপ্নের প্রেমিক হৃত্বিক তাে থাকতােই । কেমিস্ট্রি বাদ দিয়ে আমার প্রেমকাহিনীতে সবচেয়ে উল্লেখযােগ্য ভূমিকা ছিল বায়লজি টিউশনের । বিশ্বনাথদা বলে একজনের কাছে আমরা বায়লজি পড়তাম , যিনি ছিলেন শহরের সবচেয়ে নামি বায়লজি শিক্ষক । তার কাছে প্রচুর ব্যাচ পড়ত , আর প্রতিটা ব্যাচে প্রায় সত্তর , আশি জন করে পড়ত । আমি ওনার কাছে বুধ আর শনি বার বিকেল পাঁচটা
থেকে সাতটার ব্যাচে পড়তে যেতাম । বাড়ি থেকে বেশ দূরে হওয়ায় , আমি রিক্সায় করে যাতায়াত করতাম । হ্যাঁ পাঠকগণ , আমি আরাে অনেক কিছুর সাথে সাথে সাইকেল চালাতেও জানিনা । আর বন্ধুদের বেশিরভাগদেরই তাদের বাবা দিতে আসতেন । আমার বাবার ডিউটি সিডিউল বেশ চাপের হওয়াই আমি এ সুযােগ থেকেও বঞ্চিত ছিলাম । এই বায়ােলজি টিউশন থেকে ফেরার পথেই ঘটল আমার জীবনের মােড় ঘুরিয়ে দেওয়ার মত একটা ঘটনা । আসলে ঘটনা বলতে তেমন কিছুই নয় । শুধু একটা অনুভূতি যা হয়ত প্রজাপতি ব্রহ্মা স্বয়ং আমাকে দিয়ে অনুভব করিয়ে ছিলেন । দিনটা সম্ভবত এপ্রিলের নয় তারিখ ছিল । বুধবার । বায়ােলজি টিউশনে ডিএনএর রেপ্লিকেসেন এর জটিল একটা ক্লাস করে। স্যারের বাড়ির সামনেই একটা রিক্সাও পেয়ে গেলাম ।
পরবর্তী অংশ -- আমার জিবনে সত্যি প্রেমের গল্প
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন